Thursday, April 8, 2021

মঙ্গল গ্রহে পাঠানো পারসিভেরেন্স রোভার নিয়ে এতোটা হৈচৈ কেন বিজ্ঞান-মহলে? সেই বিষয়টা আপনাদের সামনে প্রকাশ করতেই আমার আজকের পর্ব।


নাসা পারসিভেরেন্স এর আগেও আরও ৪-টি সফল রোবটিক মিশন পাঠিয়েছিল মঙ্গলে। সেগুলো ছিল সোজার্নার ( Sojourner), অপুর্চুনিটি (Opportunity), স্পিরিট (Spirit), এবং কিউরিওসিটি (Curiosity)। রোভারগুলি সাফল্যের সংগে চষে বেড়িয়েছে মঙ্গলের মাটি। পৃথিবীতে পাঠিয়েছে বহু ছবি ও তথ্য।


তখন কিন্তু এতটা কৌতূহল না থাকলেও পার্সিভেরান্স এর ক্ষেত্রে কৌতূহল ও আগ্রহ দুটোই লক্ষ করা যাচ্ছে।


কারণটা বেশ আশাব্যঞ্জক।

মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা আমেরিকার অনেক আগে থেকেই। নাসার দায়িত্ব সেই পরিকল্পনাকে বাস্তব রুপ দান করা। 


আজ থেকে প্রায় বছর পঞ্চাশেক আগে নাসা জয় করেছে চাঁদ, এক বার নয়, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ৬-ছয় বার চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছে নাসা। প্রতিটি মানুষই চাঁদ গিয়ে আবার আমাদের পৃথিবীতে ফেরত এসেছেন। সর্বমোট ১২-জন এসট্রোনাটস চাঁদে পদার্পন করেছেন। আমেরিকার জন্য সে এক বিরাট সাফল্য। পৃথিবীর অন্য কোন দেশ চাদের মাটিতে মানুষ পাঠানোর সাফল্য অর্জন করতে পারেনি আজ পর্যন্ত। 


চাঁদে বার বার মানুষ পাঠানো বিপুল খরচের ব্যাপার এবং সেখান থেকে পাবার কিছু নেই বিধায় আমেরিকা গত ৫০ বছরে নতুন করে আর কোন মিশন চাঁদে পাঠায়নি। তবে, ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ এর মতো আগ্রাসী মিশন এখনও অব্যহত আছে তাদের। আমরা জানি ভয়েজারস এখন আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মাইল দূরে ছুটে চলছে, দূর থেকে আরও দূরে চলে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে পৃথিবীর সংগে। ভয়েজার মুন মিশনের চেয়েও বেশী সফলতা দেখাতে পারছে।


শনি গ্রহের চাঁদ টাইটানের মাটি স্পর্শ করেছে আমেরিকার হুইগেন্স রোভার - দেখেছে মিথেনের নদী, মিথেনের বৃষ্টি, ঝড়। সেও এক চমকপ্রদ আবিস্কার এবং সাফল্য। ৩ কোটি মাইল দূরবর্তী গ্রহানুর পৃষ্ঠ থেকে চিলের মতো ছৌ মেরে তুলে এনেছে গ্রহানুর মাটি। 


নাসা এই পর্যন্ত ২০০'র উপর মহাকাশ মিশন পরিচালনা করেছে এবং তার মধ্যে সফল মিশন ছিলো ১৩৫টি। নাসা এ পর্যন্ত যতগুলো নভোচারী বাহী মহাকাশ মিশন পাঠিয়েছে তার মধ্যে চ্যালেঞ্জার ও কলম্বিয়া মিশন ২টি ব্যর্থ হয়ে মারা গেছেন ১৪ জন এসট্রোনটস। আর এসব কিছু থেকে নাসা অর্জন করেছে অনেক অনেক অভিজ্ঞতা।


বিশাল অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত বিধায় মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর বিষয়ে চিন্তা থাকলেও সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হচ্ছিল তাদের। অবশেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ক্ষমতাকালে নতুন করে চাঁদে ও মঙ্গলে নভোচারী পাঠানোর সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনী বাজেট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিলেন। তৈরী করেছেন বিশ্বের প্রথম 'ইউএস স্পেস-ফোর্স'।


ওদিকে বেসরকারী মহাকাশ গবেষক ইলন মাস্ক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি মঙ্গলে একটি শহর তৈরী করবেন, যেখানে মানুষ বসবাস করবে। এছাড়া তিনি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। যেখানে নাসার পরিকল্পনা ২০৪০ সাল নাগাদ। এখন দেখার বিষয় কে আগে সফল হয়। নাসা নাকি স্পেস-এক্স?

মুলত মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবেই এবার নাসা মঙ্গলে পাঠিয়েছে পার্সিভেরান্স রোভরকে। 


রোভারটিকে বেশ কিছু অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে সজ্জিত করা রয়েছে।

তার মধ্যে সবচেয়ে আলচিত যন্ত্রটি হলো মোক্সি (MOXIE)। আমরা জানি মঙ্গলে খুবই পাতলা বায়ুমন্ডল রয়েছে। মঙ্গলের বায়ুমন্ডল আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তুলনায় ৯৯ শতাংশ পাতলা। এবং সেই বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড এর পরিমাণ ৯৬%। 


মোক্সির কাজ হচ্ছে মঙ্গলের বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন-ডাইঅক্সাইডকে ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভেংগে তা থেকে অক্সিজেন তৈরি করা। যদি মোক্সিফ এতে সফল হয়, তাহলে নাসা শিগগিরই পর্যাপ্ত অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য মঙ্গলে আরও বড় ধরনের মিশন পরিচালনা শুরু করবে এবং সেই তৈরীকৃত অক্সিজেন ব্যবহার করা হবে মঙ্গলের মহাকাশযানের জ্বালানী হিসাবে। প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন তৈরী করা হবে মঙ্গল গ্রহে। মানুষ যখন মঙ্গলে যাবে তখন মানুষকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে সেখান থেকেই এবং সেই উৎপাদিত অক্সিজেন আবার মঙ্গলের পরিবেশে উম্মুক্ত করে দেয়া হবে সেখানকার বায়ুমন্ডল পরিবর্তনের লক্ষ্যে। 


মোক্সি এবার পরীক্ষামূলকভাবে ১০ গ্রাম অক্সিজেন উৎপন্ন করে দেখবে আমাদের চিন্তা সঠিক পথে এগুচ্ছে কি না। যার ফলে আমরা খুব শিঘ্রই তার ফলাফল জানতে পারবো। 


এছাড়া রোভারটি যেখানে অবতরণ করেছে, ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে একসময় বড় একটি লেক ছিল যা পানিতে পরিপূর্ণ ছিল। এই ধারণাটি সত্য কি না সেটাও যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে রোভারের সংগে, অপেক্ষা শুধুই পরীক্ষার। 


বিজ্ঞানীদের ধারনা, মঙ্গলে মাটির নীচে এখনও বরফে জমাটবদ্ধ পানির অস্তিত্ব রয়েছে। সেটাও যাচাই করে দেখা হবে। আরও দেখা হবে সেই মাটিতে কোটি কোটি বছর আগে সত্যিই কোন প্রাণের অস্তিত্ব ছিলো কি না। বা এখনও কোন এককোষী প্রাণ রয়েছে কি না।


এছাড়া রোভারটি মঙ্গলের মাটি খুঁড়ে মাটির বেশ কিছু স্যাম্পল ৩৮-টি টিউবে সংগ্রহ করে রোভারে স্থাপিত নিজস্ব রকেট দিয়ে পৃথিবীতে পাঠাবে আরও বিস্তারিত গবেষনার জন্য। 


ইতোপূর্বে অপুর্চুনিটি নামের যে রোভারটি মঙ্গলে পাঠানো হয়েছিল সেটা মঙ্গলের ধুলা ঝড়ের কারনে নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীর সংগে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। 


এই ডাষ্ট বা ধুলা ঝড় মঙ্গলের জন্য এক মহাসমস্যা। সেখানে প্রায়ই ধুলা ঝড় বা ডাষ্ট-স্ট্রোম হয়। আর সেজন্যই এবার মেডা (MEDA) নামের একটি ইলেকট্রনিক সেন্সর সংযুক্ত করা হয়েছে পারসিভেরান্স রোভারের মধ্যে। মেডার কাজ হবে পরীক্ষা করে দেখা যে কতটা ডাষ্ট রয়েছে মঙ্গলের আবহাওয়ায়, কিভাবে এটি তৈরী হয় এবং এথেকে মুক্তির উপায় কি হতে পারে। ভবিষ্যতে যখন মানুষ পাঠানো হবে মঙ্গলে তখন যেন এই ডাস্ট থেকে মানুষ রক্ষা পায় সেটা নিয়ে গবেষনা করা। 


এছাড়াও পারসিভেরান্সে রয়েছে ইনজিউনিটি নামের প্রায় ২ কেজি ওজনের একটি হেলিকপ্টার। এই মার্সকপ্টারটিকে উড়ানো হবে মঙ্গলের আকাশে। হেলিকপ্টারটির ব্লেড প্রতি মিনিটে ২৫০০ বার ঘুরবে। আগেই বলেছি মঙ্গলের বায়ুমন্ডল পৃথিবীর তুলনায় ১০০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। সে কারণে সেখানে হেলিকপ্টার উড়ানো একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। আমাদের পৃথিবীর বাইরে এই প্রথম ভিনগ্রহের আকাশে উড়বে হেলিকপ্টার। 


হেলিকপ্টারটি যদি সাফল্যজনকভাবে উড়ানো যায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলের জন্য এরিয়াল মার্স মিশন শুরু হবে। তৈরী করা হবে কমপক্ষে ১ মাইল উড়ে যাওয়া সম্ভব এমন বিমান বা হেলিকপ্টার। ভবিষ্যতের নভোচারীরা সেই হেলিকপ্টারে বা বিমানে উড়ে বেড়াবে মঙ্গলের বায়ুমন্ডলে। 


অর্থাৎ মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনার জন্য এটি একটি সূদুর প্রসারী এবং দূরদর্শি মার্স মিশন। 


আগামী এক দশকের মধ্যে পৃথিবীর মানুষ নতুন প্লানেটে নতুন ঠিকানা খুঁজে পাবে এমনটাই আশাবাদী আমরা। 


আমরা জানি ১৪৯২ সালের ১২ই অক্টোবর ক্রিষ্টোফার কলম্বাস স্পেন থেকে পশ্চিম দিকে সমুদ্রপথে যাত্রা করে ইন্ডিয়া আবিস্কার করতে গিয়ে আবিস্কার করে ফেলেন দু'টি বিশাল মহাদেশ; যেটাকে বলা হতো 'নতুন পৃথিবী'।


ক্রিষ্টোফার কলম্বাস তার যাত্রা শুরু করেছিলেন ১৪৯২ সালের ৩রা আগষ্ট। 


ভাবুন তো ঠিক সেই সময় স্পেনের রানী তথা স্পেনবাসীর মনের কেমন অবস্থা ছিল যখন সত্যি সত্যিই ভয়ংকর আটলানটিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে নতুন কিছু আবিস্কারের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন কলম্বাস।


মঙ্গল মিশনও আমাদের কাছে তেমনই বিস্ময়কর এবং আশ্চর্যের। শুধুমাত্র ১৩০ মিলিয়ন মাইল দূরত্বের বা ৬ মাসের যাত্রাপথের মঙ্গলের মাটি নয়; আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি ৫৮৭ আলোকবর্ষ দূরের কেপলার (Kepler-22b) গ্রহে মানুষের অবতরণ দেখতে।


আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে আবারও দেখা হচ্ছে সে পর্যন্ত ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ।


Friday, December 4, 2020

কঙ্কাল উপকূল (নামিবিয়া) | Skeleton Coast - Namibia's "Gates of Hell"

পর্তুগিজ তিমি শিকারী নাবিক জলদস্যুরা জায়গাটির নাম দিয়েছিল গেট অব হেল। আর নামিবিয়ার বুশম্যান গোষ্ঠীর লোকজনের মতে এলাকাটি ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন প্রচন্ড রাগ নিয়ে। কর্কশ কঠোর সেখানকার পরিবেশ প্রকৃতি। ছোটখাটো কিছু প্রাণী সেখানে বেঁচে থাকে কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে। উদ্দাম সাগরপাড়ের মরুময় শুষ্ক এই পরিবেশে আদ্রতার একমাত্র উৎস সামুদ্রিক জলীয়বাষ্প। ছোট ছোট পশুপাখি বিশেষ করে একধরনের শিয়াল সেখানে তৃষ্ণা মেটায় পাথরের গায়ে মিশে থাকা জলীয় বাস্প

Friday, November 13, 2020

কেমন হবে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ? Gobal Politics & Future World [Documentary] | AD...

কি অস্ত্র দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে, তা হয়তো যানা নেই, তবে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হবে লাঠি আর পাথর দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক সাক্ষাৎকারে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এই মন্তব্যটি করেছিলেন।

ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে বহুমাত্রিক, বৈচিত্র্যময় ও কৌশলপূর্ণ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ভূরাজনীতি যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিই বদলে দেবে।

আজকে কেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কথা বলছি তা হয়তো আপনারা আঁচ করতে পেরেছেন।

তো চলুন আজকে বিশ্ব রাজনীতি আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশংকা নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা করি।

নতুন বছরের তৃতীয় দিন সকাল থেকেই দেশ-বিদেশের নিউজ ফিডগুলোতে লিড নিউজ হিসেবে ভাসতে থাকে একটি খবর, তা হোল মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত। আঞ্চলিক শত্রু সৌদি আরব, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে ছিলেন তিনি। ঠিক তার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে যে বিষয়টি মানুষের খোঁজার তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে তা হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এতে ইরান কয়েকটা হুমকি ধামকি দিলেও, পরবর্তীতে আবার নীরব ভুমিকা পালন করেছে।

বর্তমান সময়ে আলোচনার শীর্ষে থাকা দেশ গুলোর মধ্যে তুরস্ক, চীন, রাশিয়া, ইরান, ভারত, উত্তর কোরিয়া, অ্যামেরিকা অন্যতম। এই দেশ গুলোই আবার পরমাণু অস্ত্রের শক্তিতে এগিয়ে। কেউ কাউকে তোয়াক্কা করে না একেবারেই। বলে রাখা ভাল বর্তমান পৃথিবীতে মোট পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০টি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই বিপুল পরিমান বোমা দিয়ে এই সবুজ পৃথিবীকে ৩৮ বার পুরপুরি ভাবে ধ্বংস করা সম্ভব। হিরোশিমা ও নাগাসাকির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? যার তেজস্ক্রিয়তার ফল এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে জাপান। আইনস্টাইনের মন্তব্য শতভাগ সত্য হবে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়। আর এই সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল আকার ধারন করেছে বর্তমানে। সেই সাথে মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনা গুলো এই সম্ভাবনাকে আরও উস্কে দিচ্ছে।

আর এই সংকটের মধ্যে তুষের আগুনে ঘি ঢেলেছে ফ্রাঞ্চ। কিছুদিন আগে প্যারিসে এক শিক্ষক হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স সরকার মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) কে খুব বাজে ভাবে কটূক্তি করেছে এবং ফল স্বরূপ সারা বিশ্বের মুসলিমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও ফ্রান্সের পন্য বর্জন করার হুমকি দেয়া হয়। বাংলাদেশ সহ অন্য মুসলিম দেশ গুলো ফ্রান্সের সাথে সাইবার যুদ্ধ শুরু করে। ফলশ্রুতিতে ফ্রান্সের সরকারি ও বেসরকারি বহু ওয়েবসাইট আক্রমণের শিকার হয়। এদিকে গোটা ভারত আজ ফ্রান্সের পাশে। জিহাদি হামলার বিরুদ্ধে ফ্রান্স যে লড়াই চালাচ্ছে তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সঙ্গী হওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ফ্রান্সকে সকল ধরনের সহায়তা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত। এ থেকে প্রমাণিত হয় তারা চরমভাবে মুসলিম বিদ্বেদেশি। এরই মদ্ধে ভারতের মুম্বাইয়ের ব্যস্ত রাস্তায় সেঁটে দেওয়া হয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সারি সারি ছবি।  তার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ির চাকা আর হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। দক্ষিণ মুম্বইয়ের জে জে ফ্লাইওভারের নীচে মোহাম্মাদ আলি রোড এবং ভেন্ডি বাজার এলাকায় উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই ফরাসি প্রেসিডেন্টের ছবির পোস্টার রাস্তায় সাঁটা হয়েছিল।

 

ভারত-বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশ হলেও তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক হয়তো মোটামুটি ভালো কিন্তু দু দেশের জনগনের মধ্যে যে রেশারেশি তা লক্ষ করা যায় ফেসবুক সহ অন্যন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার পাতা গুলোতে। বলা যায়, একরকম স্নায়ু যুদ্ধ।

ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এখন মার্কিন প্রতিরক্ষার মূল লক্ষ্যক্ষমতার লড়াই। আর তাদের প্রধান হুমকি চীন ও রাশিয়া। অপরদিকে চীনের সাথে ভারত ও অ্যামেরিকার দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জনগণ প্রধান হুমকি বলে মনে করে রাশিয়াকে।

এবার চলুন আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার সংঘাত সম্পর্কে একটু জেনে নেই।

এরই মধ্যে এই দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক লড়াই। ২৬ বছর আগের যুদ্ধে আজারবাইজান কোণঠাসা হয়ে পড়লেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এতদিনে অর্থনৈতিক ও সামরিকদুই ক্ষেত্রেই আর্মেনিয়াকে পেছনে ফেলেছে আজারবাইজান। এই দুই দেশের যুদ্ধে ছায়াসঙ্গী হয়েছে আরও তিনটি দেশ। তুরস্ক সরাসরি পক্ষ নিয়েছে আজারবাইজানের। অপরদিকে অনেকটা দুই পক্ষেই রয়েছে রাশিয়া। তবে আর্মেনিয়ার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা বেশি। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধ শেষতক রাশিয়া ও তুরস্কের ছায়াযুদ্ধে পরিণত হবে বলেই মনে হয়। ঠিক যেমনটা সিরিয়া ও লিবিয়ায় হচ্ছে। অন্যদিকে ইরানের সীমান্ত বরাবর কারাবাখ অঞ্চল। তবে ধর্মনিরপেক্ষ আজারবাইজানের সঙ্গে দেশটির ঠিক বনে না। অন্যদিকে আর্মেনিয়াকে গোপনে সহায়তা দেওয়ার কথাও অস্বীকার করেছে ইরান।

ইরান-আমেরিকা, চীন-আমেরিকা, ভারত-চীন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন, ইরান-সৌদি আরব, আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া, ভারত-পাকিস্তান, আমেরিকা-রাশিয়া ইত্যাদি ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে চলছে অহিনকুল সম্পর্ক। এরই মধ্যে বিশ্ব জুড়ে গত বছর ডিসেম্বরে মহামারী রুপ নিয়েছে করোনা ভাইরাস। আর সেখান থেকে অন্যান্য দেশ গুলোর কাছে চীন এখন বিষফোঁড়ার মত।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তিগুলো পরস্পরকে নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিয়েই চলেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অস্থিরতা ক্রমশই জোরালো হতে শুরু করে। এ যুদ্ধে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছিল রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট আসাদ বিরোধীদের নানাভাবে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

ইসরাইল ফিলিস্তিনের ইতিহাস তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মদ্ধ দিয়ে ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণকে নির্মম ভাবে হত্যা করে চলেছে ইসরাইল। পুরো পৃথিবী জুড়ে এখন মুসলিমদের পদদলিত করার মহোৎসব চলছে। মুসলিমরা আখ্যা পাচ্ছে জঙ্গি নামে। কিন্তু দেখা যায়, এই জঙ্গি তৈরিতে যারা মদত দেয় তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হতে পারে এটাই মুসলিমদের নির্মূল করার এক অভিনব পন্থা। এখানে কাশ্মিরের মুসলিমদের কথাও উল্লেখ করা জরুরী। তারাও রেহায় পাচ্ছে না বারুদের হিংস্রতা থেকে।

বর্তমান আধুনিক বিশ্বে একটি বড় সুবিধা হোল, শত্রুকে মারতে তার ঘরে প্রবেশের প্রয়োজন পড়ে না, দূর নিয়ন্ত্রিত ড্রোন দিয়ে যখন ইচ্ছা সুবিধা মত আক্রমন করা যায়। যেভাবে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছিল। এরকম হামলা এখন ডাল ভাতের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আরেকটা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি খুব শিঘ্রই আমাদের সামনে আস্তে যাচ্ছে, টা হোল অটোনোমাস ওয়েপনস সিস্টেমস এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যার দ্বারা রোবট নিজেই মানুষ হত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যেকোনো সময়। ঘাতক রোবট তখন রণক্ষেত্রের হিসাব-নিকাশ পুরপুরি ভাবে উল্টে দেবে। তখন আর কষ্ট করে মানুষকে যুদ্ধ করতে হবে না। এমনও হতে পারে ঘরে বসে টিভিতে লাইভ যুদ্ধ দেখছেন আপনি। যাই হোক আসন্ন বিপদের কথা ভেবে এই প্রযুক্তি বাস্তবে আসার আগেই তার বিরোধিতা করছেন স্টিফেন হকিংসহ অনেকে।

যদিও উত্তেজনা বাড়ছে কিন্তু একই সাথে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অনেকেই কাজ করছেন। পৃথিবীজুড়ে যেসব শান্তিকামী নাগরিক সমাজ আছে তারা সরকারগুলোর উপর চাপ তৈরি করছে যাতে তারা সংঘাতে না জড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু তার পরেও এসবের তোয়াক্কা না করেই ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ চলছে একে অপরকে কেন্দ্র করে, ক্ষমতা কে ছাড়তে চাই বলেন। একের পর এক পারমাণবিক শক্তির মোহড়া আর সেই তেজস্ক্রিয়তায় বৈশ্বিক আবহাওয়ার বিপর্যয় পৃথিবীর জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনছে। তারই বহিঃপ্রকাশ যে করোনা মহামারী তা কিন্তু আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না। প্রকৃতিও এখন মানুষের কার্যকলাপের উপর দারুন ভাবে ক্ষিপ্ত। আর এই সকল ঘটনা গুলো ধীরে ধীরে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে তরান্বিত করে চলেছে।

আমার হিসেব মতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে, আমরা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করি না তাই হয়তো বুঝতে পারি না। একটা কথা মাথায় রাখবেন, যুদ্ধ কিন্তু চলছে এবং ধীরে ধীরে এটা আরও ব্যপকতা লাভ করবে। কারন এর শেষ কোথায় তা আমাদের অজানা। সবকিছু শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলতেই থাকবে।

সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা বা ক্ষমতার বড়ায় কখনো সুফল বয়ে আনবে না। খতিগ্রস্থ হবে উভয়পক্ষই। 

Feature Post