Thursday, March 12, 2020

ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক | Yellowstone National Park - Old Faithful | A...





আমেরিকা খুব বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। বৈচিত্র্যময় এই দেশে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান। আমেরিকার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ন্যাশনাল পার্ক। পার্কের ভিতরে রয়েছে পর্বতমালা, সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, উপ-আল্পাইন অরণ্য, গিরিখাত, নদী ও হ্রদ। পার্কটি ১৮৭২ সালে রাষ্ট্রপতি ইউলিসিস এস. গ্র্যান্ট প্রতিষ্ঠিত করেন। পার্কটি মুলত ওয়াইয়োমিং রাজ্যে অবস্থিত হলেও, পরে মন্টানাইডাহোতেও প্রসারিত হয়েছে। জীব বৈচিত্র্য ও জিওথারমাল বৈশিষ্টের জন্য পার্কটি খুবই বিখ্যাত।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি হল আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর super volcano। ভয়ংকর এই আগ্নেয়গিরিতেই যুক্তরাষ্ট্রের সুবিখ্যাত জাতীয় উদ্যান ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক গড়ে উঠেছে। এই গোটা পার্কটি একটি ঘুমন্ত বা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির উপরে অবস্থিত। ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যানের আয়তন ৮,৯৮০ বর্গকিলোমিটার। স্থানীয় আমেরিকানরা ইয়েলোস্টোন অঞ্চলে প্রায় ১১,০০০ বছর ধরে বসবাস করেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে লুইস ও ক্লার্ক অভিযানের সময় এই অঞ্চলটি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত পর্বতচারীরা মাঝে মাঝে এখানে এলেও, সুসংহত অভিযান শুরু হয় ১৮৬০-এর দশকে।


এই জাতীয় উদ্যানের ফোয়ারাটির নাম হল Old Faithful। এখানে প্রতি এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর পরই এই জলের খেলা দেখা যায়, যা কিনা ১৯০ ফুট পর্যন্ত উপরে ওঠে। আর স্থায়িত্বও ৫ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার গভীর ভুঅভ্যন্তর থেকে আসা এই জল প্রতি বার ১৪ হাজার থেকে ৩২ হাজার লিটার ভূপৃষ্ঠে ছিটিয়ে দেয়। পৃথিবীর এখানে অখানে হঠাৎ করে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠা সাধারন আগ্নেয়গিরির সঙ্গে super volcano গুলোর অনেক পার্থক্য আছে। super volcano সাধারন আগ্নেয়গিরির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও ভয়ংকর। সাধারন আগ্নেয়গিরির মত এর উদ্গিরন ঘন ঘন হয় না। এরা জেগে ওঠে কয়েক হাজার বছরে মাত্র একবার বা তারও কম এবং এরাই পৃথিবীর ভউগলিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী।  গানিতিক হিসেবে সেসব আগ্নেয়গিরিকেই super volcano বলা হয়, যেগুলো ১০০০ কিউবিক কিলোলিটারের অধিক উদগিরন করতে সক্ষম। যা বেশিরভাগ ঐতিহাসিক উদ্গিরনের চেয়ে হাজার হাজার গুন বেশি শক্তিশালী। এই ক্ষমতাধর আগ্নেয়গিরির তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে আছে ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক । এই অতিকায় আগ্নেয়গিরিটি ধীরে ধীরে তার ভূগর্ভ থেকে লাভা উদ্গিরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগ্নেয়গিরিটির পাথর মিশ্রিত গলিত লাভা গুলো দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও ২০০৪ সাল থেকে সেটা রেকর্ড হারে জেগে উঠেছে। রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গত ১৫ বছরে লাভা স্তর প্রায় ১২ ইঞ্ছি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আগ্নেয়গিরিটি জেগে উঠলে দেশটির দুই তৃতীয়াংশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে। জলন্ত লাভার ধোঁয়া ছড়িয়ে পরবে আকাশ জুড়ে এবং বিষাক্ত ছাইয়ে প্রায় ১০ ফুট পুরু আস্তরণ তৈরি হতে পারে আশেপাশের প্রায় ১০০০ মাইল দূর পর্যন্ত। কোটি কোটি মানুষ কে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে। ব্যহত হবে বিমান চলাচল ব্যবস্থা। এই আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ভয়াবহতা সাম্প্রতিক আইচল্যান্ডের আগ্নেয়গিরির অগ্নুতপাতকেও বহুগুণে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি ১৯৮০ সালে Mount Saint Helens এর উদ্গিরন থেকেও হাজার গুন বেশি শক্তিশালী হবে ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ। মানুষের ইতিহাসে প্রায় ৬ লক্ষ বছরের মধ্যে প্রথম বারের মত এধরনের একটা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে বিজ্ঞানীরা। এই super volcano র সাম্প্রতিক আচরনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে বিশেষজ্ঞরা। এই আগ্নেয়গিরিটি জেগে উঠলে এর পরিনাম হবে মারাত্মক ভয়াবহ। পৃথিবীর ভউগলিক পরিবর্তন ও মানবজাতির বিলুপ্তির অন্নতম কারন হতে পারে এই super volcano। ইয়েলোস্টোনে শেষ বিস্ফোরণ ঘটেছিলো প্রায় ৬ লক্ষ ৪০ হাজার বছর পূর্বে, তারও আগে দুইটি বিস্ফোরণ ঘটেছিলো প্রায় ১৩ ও ২১ লক্ষ্ বছর পূর্বে। সে অনুযায়ী আর মাত্র ৯০ হাজার বছর পর ইয়েলোস্টোন আরও একবার জেগে উঠতে পারে। সর্বশেষ বিস্ফোরণের সময় আনুমানিক ১০০০ ঘন কিলোলিটার ছাই পাথর বেরিয়েছিল। প্রায় ৭৫ হাজার বছর আগে ইন্দনেশিয়ার সুমাত্রায় টোবা আগ্নেয়গিরির অগ্নুতপাতে মানবজাতির অধিকাংশ বিলুপ্তি হয়েছিল। তখনকার জীবাশ্মগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই ধারনা পোষণ করেছিল। হতে পারে সেই সময়টা অতি নিকটে আর হঠাৎই ঘুম থেকে জেগে উঠল আগ্নেয়গিরি ইয়েলোস্টোন।

0 comentários:

Post a Comment

Feature Post