Friday, November 13, 2020

কেমন হবে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ? Gobal Politics & Future World [Documentary] | AD...

কি অস্ত্র দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে, তা হয়তো যানা নেই, তবে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হবে লাঠি আর পাথর দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক সাক্ষাৎকারে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এই মন্তব্যটি করেছিলেন।

ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে বহুমাত্রিক, বৈচিত্র্যময় ও কৌশলপূর্ণ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ভূরাজনীতি যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিই বদলে দেবে।

আজকে কেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কথা বলছি তা হয়তো আপনারা আঁচ করতে পেরেছেন।

তো চলুন আজকে বিশ্ব রাজনীতি আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশংকা নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা করি।

নতুন বছরের তৃতীয় দিন সকাল থেকেই দেশ-বিদেশের নিউজ ফিডগুলোতে লিড নিউজ হিসেবে ভাসতে থাকে একটি খবর, তা হোল মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত। আঞ্চলিক শত্রু সৌদি আরব, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে ছিলেন তিনি। ঠিক তার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে যে বিষয়টি মানুষের খোঁজার তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে তা হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এতে ইরান কয়েকটা হুমকি ধামকি দিলেও, পরবর্তীতে আবার নীরব ভুমিকা পালন করেছে।

বর্তমান সময়ে আলোচনার শীর্ষে থাকা দেশ গুলোর মধ্যে তুরস্ক, চীন, রাশিয়া, ইরান, ভারত, উত্তর কোরিয়া, অ্যামেরিকা অন্যতম। এই দেশ গুলোই আবার পরমাণু অস্ত্রের শক্তিতে এগিয়ে। কেউ কাউকে তোয়াক্কা করে না একেবারেই। বলে রাখা ভাল বর্তমান পৃথিবীতে মোট পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০টি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই বিপুল পরিমান বোমা দিয়ে এই সবুজ পৃথিবীকে ৩৮ বার পুরপুরি ভাবে ধ্বংস করা সম্ভব। হিরোশিমা ও নাগাসাকির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? যার তেজস্ক্রিয়তার ফল এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে জাপান। আইনস্টাইনের মন্তব্য শতভাগ সত্য হবে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়। আর এই সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল আকার ধারন করেছে বর্তমানে। সেই সাথে মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনা গুলো এই সম্ভাবনাকে আরও উস্কে দিচ্ছে।

আর এই সংকটের মধ্যে তুষের আগুনে ঘি ঢেলেছে ফ্রাঞ্চ। কিছুদিন আগে প্যারিসে এক শিক্ষক হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স সরকার মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) কে খুব বাজে ভাবে কটূক্তি করেছে এবং ফল স্বরূপ সারা বিশ্বের মুসলিমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও ফ্রান্সের পন্য বর্জন করার হুমকি দেয়া হয়। বাংলাদেশ সহ অন্য মুসলিম দেশ গুলো ফ্রান্সের সাথে সাইবার যুদ্ধ শুরু করে। ফলশ্রুতিতে ফ্রান্সের সরকারি ও বেসরকারি বহু ওয়েবসাইট আক্রমণের শিকার হয়। এদিকে গোটা ভারত আজ ফ্রান্সের পাশে। জিহাদি হামলার বিরুদ্ধে ফ্রান্স যে লড়াই চালাচ্ছে তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সঙ্গী হওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ফ্রান্সকে সকল ধরনের সহায়তা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত। এ থেকে প্রমাণিত হয় তারা চরমভাবে মুসলিম বিদ্বেদেশি। এরই মদ্ধে ভারতের মুম্বাইয়ের ব্যস্ত রাস্তায় সেঁটে দেওয়া হয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সারি সারি ছবি।  তার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ির চাকা আর হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। দক্ষিণ মুম্বইয়ের জে জে ফ্লাইওভারের নীচে মোহাম্মাদ আলি রোড এবং ভেন্ডি বাজার এলাকায় উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই ফরাসি প্রেসিডেন্টের ছবির পোস্টার রাস্তায় সাঁটা হয়েছিল।

 

ভারত-বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশ হলেও তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক হয়তো মোটামুটি ভালো কিন্তু দু দেশের জনগনের মধ্যে যে রেশারেশি তা লক্ষ করা যায় ফেসবুক সহ অন্যন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার পাতা গুলোতে। বলা যায়, একরকম স্নায়ু যুদ্ধ।

ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এখন মার্কিন প্রতিরক্ষার মূল লক্ষ্যক্ষমতার লড়াই। আর তাদের প্রধান হুমকি চীন ও রাশিয়া। অপরদিকে চীনের সাথে ভারত ও অ্যামেরিকার দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জনগণ প্রধান হুমকি বলে মনে করে রাশিয়াকে।

এবার চলুন আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার সংঘাত সম্পর্কে একটু জেনে নেই।

এরই মধ্যে এই দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক লড়াই। ২৬ বছর আগের যুদ্ধে আজারবাইজান কোণঠাসা হয়ে পড়লেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এতদিনে অর্থনৈতিক ও সামরিকদুই ক্ষেত্রেই আর্মেনিয়াকে পেছনে ফেলেছে আজারবাইজান। এই দুই দেশের যুদ্ধে ছায়াসঙ্গী হয়েছে আরও তিনটি দেশ। তুরস্ক সরাসরি পক্ষ নিয়েছে আজারবাইজানের। অপরদিকে অনেকটা দুই পক্ষেই রয়েছে রাশিয়া। তবে আর্মেনিয়ার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা বেশি। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধ শেষতক রাশিয়া ও তুরস্কের ছায়াযুদ্ধে পরিণত হবে বলেই মনে হয়। ঠিক যেমনটা সিরিয়া ও লিবিয়ায় হচ্ছে। অন্যদিকে ইরানের সীমান্ত বরাবর কারাবাখ অঞ্চল। তবে ধর্মনিরপেক্ষ আজারবাইজানের সঙ্গে দেশটির ঠিক বনে না। অন্যদিকে আর্মেনিয়াকে গোপনে সহায়তা দেওয়ার কথাও অস্বীকার করেছে ইরান।

ইরান-আমেরিকা, চীন-আমেরিকা, ভারত-চীন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন, ইরান-সৌদি আরব, আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া, ভারত-পাকিস্তান, আমেরিকা-রাশিয়া ইত্যাদি ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে চলছে অহিনকুল সম্পর্ক। এরই মধ্যে বিশ্ব জুড়ে গত বছর ডিসেম্বরে মহামারী রুপ নিয়েছে করোনা ভাইরাস। আর সেখান থেকে অন্যান্য দেশ গুলোর কাছে চীন এখন বিষফোঁড়ার মত।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তিগুলো পরস্পরকে নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিয়েই চলেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অস্থিরতা ক্রমশই জোরালো হতে শুরু করে। এ যুদ্ধে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছিল রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট আসাদ বিরোধীদের নানাভাবে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

ইসরাইল ফিলিস্তিনের ইতিহাস তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মদ্ধ দিয়ে ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণকে নির্মম ভাবে হত্যা করে চলেছে ইসরাইল। পুরো পৃথিবী জুড়ে এখন মুসলিমদের পদদলিত করার মহোৎসব চলছে। মুসলিমরা আখ্যা পাচ্ছে জঙ্গি নামে। কিন্তু দেখা যায়, এই জঙ্গি তৈরিতে যারা মদত দেয় তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হতে পারে এটাই মুসলিমদের নির্মূল করার এক অভিনব পন্থা। এখানে কাশ্মিরের মুসলিমদের কথাও উল্লেখ করা জরুরী। তারাও রেহায় পাচ্ছে না বারুদের হিংস্রতা থেকে।

বর্তমান আধুনিক বিশ্বে একটি বড় সুবিধা হোল, শত্রুকে মারতে তার ঘরে প্রবেশের প্রয়োজন পড়ে না, দূর নিয়ন্ত্রিত ড্রোন দিয়ে যখন ইচ্ছা সুবিধা মত আক্রমন করা যায়। যেভাবে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছিল। এরকম হামলা এখন ডাল ভাতের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আরেকটা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি খুব শিঘ্রই আমাদের সামনে আস্তে যাচ্ছে, টা হোল অটোনোমাস ওয়েপনস সিস্টেমস এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যার দ্বারা রোবট নিজেই মানুষ হত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যেকোনো সময়। ঘাতক রোবট তখন রণক্ষেত্রের হিসাব-নিকাশ পুরপুরি ভাবে উল্টে দেবে। তখন আর কষ্ট করে মানুষকে যুদ্ধ করতে হবে না। এমনও হতে পারে ঘরে বসে টিভিতে লাইভ যুদ্ধ দেখছেন আপনি। যাই হোক আসন্ন বিপদের কথা ভেবে এই প্রযুক্তি বাস্তবে আসার আগেই তার বিরোধিতা করছেন স্টিফেন হকিংসহ অনেকে।

যদিও উত্তেজনা বাড়ছে কিন্তু একই সাথে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অনেকেই কাজ করছেন। পৃথিবীজুড়ে যেসব শান্তিকামী নাগরিক সমাজ আছে তারা সরকারগুলোর উপর চাপ তৈরি করছে যাতে তারা সংঘাতে না জড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু তার পরেও এসবের তোয়াক্কা না করেই ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ চলছে একে অপরকে কেন্দ্র করে, ক্ষমতা কে ছাড়তে চাই বলেন। একের পর এক পারমাণবিক শক্তির মোহড়া আর সেই তেজস্ক্রিয়তায় বৈশ্বিক আবহাওয়ার বিপর্যয় পৃথিবীর জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনছে। তারই বহিঃপ্রকাশ যে করোনা মহামারী তা কিন্তু আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না। প্রকৃতিও এখন মানুষের কার্যকলাপের উপর দারুন ভাবে ক্ষিপ্ত। আর এই সকল ঘটনা গুলো ধীরে ধীরে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে তরান্বিত করে চলেছে।

আমার হিসেব মতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে, আমরা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করি না তাই হয়তো বুঝতে পারি না। একটা কথা মাথায় রাখবেন, যুদ্ধ কিন্তু চলছে এবং ধীরে ধীরে এটা আরও ব্যপকতা লাভ করবে। কারন এর শেষ কোথায় তা আমাদের অজানা। সবকিছু শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলতেই থাকবে।

সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা বা ক্ষমতার বড়ায় কখনো সুফল বয়ে আনবে না। খতিগ্রস্থ হবে উভয়পক্ষই। 

1 comment:

Feature Post