যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি | United States Presidential ...
বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তির প্রসঙ্গ এলেই সবার আগে আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নাম। আর এই ক্ষমতাধর ব্যাক্তিটি কে হবেন আর কে যাবেন হুয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্র সেই সিদ্ধান্ত প্রতি ৪ বছর পর পর নিয়ে থাকে। সাধারণত নভেম্বারের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা অন্যান্ন দেশ থেকে আলাদা এবং কিছুটা জটিল। তো চলুন যেনে নেই যুক্তরাষ্ট্রে ২০০ বছরের পুরনো এই নির্বাচন প্রক্রিয়া কিভাবে হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে
গেলে ৩ টি শর্ত মানতে হয়। প্রথমত তাকে জন্মগত ভাবে মার্কিন নাগরিক হতে হবে।
বয়স হতে হবে ৩৫ বা তার বেশি এবং অন্তত
১৪ বছর তাকে স্থায়ী ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন প্রক্রিয়া
শুরু হয় মুলত দেশটির বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যের প্রাথমিক নির্বাচন এবং ককাসের মধ্য দিয়ে।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চলে এই প্রক্রিয়া। এই দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রধানত দুটি
দল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টি তাদের প্রতিনিধি বা প্রার্থী নির্বাচন
করে থাকেন। ককাসে পার্টির স্থানীয় সদস্যরা তাদের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে
একজনকে বেছে নিতে একাধিক বৈঠক করেন আলোচনা করেন এবং ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন তাদের
দলের জন্য কে সেরা প্রার্থী। প্রাথমিক নির্বাচনে পার্টি সদস্যরা গোপন ব্যালটে নিজেদের
মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করেন যিনি সাধারন নির্বাচনে দলকে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
কিছু অঙ্গরাজ্যে শুধুমাত্র প্রাথমিক, কিছু অঙ্গরাজ্যে শুধুমাত্র ককাস এবং বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোতে
দুটোই হয়ে থাকে। প্রাথমিক এবং ককাসের পর দুই দল পৃথক জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে চূড়ান্ত
ভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নেন। সম্মেলনে পার্টির সেই মনোনীত প্রার্থী তার পছন্দের
ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করেন। পরে দুই দলের প্রার্থী সাধারন জনগণের সমর্থন আদায়ে
দেশ জুড়ে প্রচার প্রাচারনা শুরু করেন। এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীর সাথে বিতর্কে
অংশ নেন। এভাবেই শুরু হয় সাধারন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা।
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারন নির্বাচনে একজন প্রার্থী
সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়েও পরাজিতি হতে পারেন। কারন তিনি কত জনপ্রিয় ভোট পেয়েছেন সেটা
মুখ্য বিষয় নয় বরং তিনি ইলেক্ট্রোরাল কলেজে কতোটা ভোট পেয়েছেন সেটাই মুখ্য। সহজভাবে
বলতে গেলে অন্যন্ন দেশের জনগন সরাসরি প্রার্থী বা দলকে ভোট দিয়ে থাকেন। যে বেশি ভোট
পায় তাকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাররা
কোন দল বা প্রার্থীকে ভোট দেন না। তারা মুলত ঐ রাজ্যটির একদল মানুষকে ভোট দিয়ে থাকেন।
এই মানুষগুলো হল ইলেক্টর বা নির্বাচক। এবং একটি রাজ্যের একদল ইলেক্টারকে বলা হয় ইলেক্টরাল
কলেজ।
যুক্তরাষ্ট্রে যে ৫০ টি অঙ্গরাজ্য এবং
ওয়াশিংটন ডিসি বা ডিসট্রিক্ট অব কলোম্বিয়া রয়েছে এগুলো একেকটি ইলেক্টরাল কলেজ। সেই
হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫১টি এলেক্টরাল কলেজ রয়েছে। একেকটি এলেক্টরাল কলেজে ইলেক্টরের
সংখ্যা একেক রকম। এটা নির্ভর করে ঐ রাজ্যের জনসংখ্যা ও কংগ্রেসের কতজন প্রতিনিধি আছেন
তার উপর। উচ্চ কক্ষ সিনেট এবং নিম্ম কক্ষ প্রতিনিধি পরিশোধ মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের
মোট প্রতিনিধি ৫৩৮ জন। সেই হিসেবে ইলেক্টরের সংখ্যা ৫৩৮ জন। যেমন মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে
সিনেটর ২ জন এবং প্রতিনিধি পরিশধে ৮ জন সদস্য রয়েছে। তাহলে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে
ইলেক্টর হবেন ১০ জন। সুতরাং সাধারন ভোটাররা ইলেক্টরদের ভোট দেন এবং ইলেক্টররা প্রার্থী
নির্বাচন করেন। অর্থাৎ ভোটারদের পরোক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
সাধারন নির্বাচনে ৫৩৮ জন ইলেক্টর বা নির্বাচকরাই
সরাসরি প্রার্থী নির্বাচন করে থাকেন। এজন্য একজন ইলেক্টর একটি করে ভোট দিতে পারেন।
একে বলা হয় ইলেক্টরাল ভোট। যে প্রার্থী ২৭০ বা তার বেশি ইলেক্টরাল ভোট পান তিনিই প্রেসিডেন্ট
নির্বাচিত হন। নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহন করেন এবং ২০ই
জানিয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল ভবনে তাদের নিয়ে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
যদি কোন প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেক্টরাল
ভোট না পান তবে ভোটটি কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ বা প্রতিনিধি পরিশোধে চলে যাবে। প্রতিনিধি
পরিশোধের সদস্যরা নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন এবং সিনেট ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
করবেন। তবে এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একবারই ঘটেছিল ১৮২৪ সালে। প্রতিনিধি পরিশোধ
জন কুইন্সি এডামসকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল।
প্রতিটি রাজ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর
নিজস্ব ইলেক্টরদের দল থাকে যাকে বলা হয় ইলেক্টরাল স্লেট। সাধারণত ঐ রজ্যে প্রার্থীর
দল এই স্লেট বাছাই করে থাকেন। তবে ইলেক্টরদের বেছে নেয়ার পদ্ধতি এবং তাদের দায়িত্ব
একেক রাজ্যের আইন অনুযায়ী একেক রকম হয়ে থাকে।
ভোট গননা পদ্ধতিঃ
সাধারণত, কোন রাজ্যে যে প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা
পান সব ভোট তার পক্ষে চলে যায়। একে বলা হয় উইনার টেক অল অর্থাৎ জয়ী প্রার্থী সব ভোট
নিয়ে নেবে। ধরা যাক A প্রার্থী ও B প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এখন মেরিল্যান্ড
অঙ্গরাজ্যে ১০ জন ইলেক্টরের ৬টি ভোট পেয়েছে A এবং বাকি ৪টি পেয়েছে B। তাহলে ঐ ইলেক্টরাল
কলেজের ১০টি ভোটই A প্রার্থীর পক্ষে চলে যাবে। এই নিয়মটা ৪৮টি অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটন
ডিসির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে নেব্রাস্কা ও প্রধান অঙ্গরাজ্যের নিয়ম ভিন্ন। সেখানে
যে দল যত ভোট পাবে ঠিক ততো ভোটই পাবে, সব ভোট পাবে না। এ কারনে প্রার্থীদের নজর থাকে
বড় অঙ্গরাজ্যগুলোর দিকে। অর্থাৎ যেসব রাজ্যে বা ইলেক্টরাল কলেজে ইলেক্টরদের সংখ্যা
বেশি থাকে। যেমন ভারমান সহ কয়েকটি ছোট অঙ্গরাজ্যে মাত্র ৩ জন করে ইলেক্টর রয়েছেন। অন্যদিকে
শুধুমাত্র ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টরের সংখ্যা ৫৫ জন। তাই প্রার্থীরা ক্যালিফোর্নিয়া,
টেক্সাস বা ফ্লোরিডার মতো রাজ্যগুলোই জয়ী হতে চান। কারন এই ৩টি রাজ্যে জয়ী হলে মোট
১২২টি ইলেক্টরাল ভোট পাওয়া যায়। অন্যদিকে কোন প্রার্থী যদি নর্থ ডেকোডা, সাউথ ডেকোডা,
মন্টেনা, ডেলাওয়ার, অয়াইওমিং, ভারমন্ট, আলাস্কা, ডিসট্রিক্ট অব কলোম্বিয়া, এই ৮টি রাজ্যে
জয়ী হন তারপরেও তিনি ইলেক্টরাল ভোট পাবেন মাত্র ২৪টি। এসব কারনে ২০১৬ সালের নির্বাচনে
হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে ৩০ লাখ ভোট কম পেয়েও জয়ী হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারন তিনি
এগিয়ে ছিলেন বড় অঙ্গরাজ্য গুলোর ইলেক্টরাল ভোটে। তবে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ নির্বাচনে
ছোট অঙ্গরাজ্য গুলো ফলাফল নির্ধারণ করে থাকে। তাই এই সকল রাজ্য গুলোকে ছোট করে দেখার
সুযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বছরের পর বছর ডেমোক্রেটরা জয়ী হয়ে আসছে। রিপাবলিকানদের ক্ষেত্রেও এমন কিছু ধরা বাধা রাজ্য রয়েছে। যেমন মেরিল্যান্ড, মিশিগান এবং ম্যাসাচুয়েটস অঙ্গরাজ্যগুলো ডেমোক্রেটদের দখলে বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে মিসিসিপি, ক্যানসাস, অ্যালাব্যামা, আইডাহো রিপাবলিকান অধ্যুষিত রাজ্য। তবে এর মধ্যে টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া সহ ১৪টি অঙ্গরাজ্য আছে দোদুল্যমান যাদেরকে ব্যাটল্গ্রাউন্ড বলা হয়। এসব অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা গরিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে কারা সরকার গঠন করবে। একারনে সবসময় দুই প্রার্থীর চোখ থাকে এই সকল অঙ্গরাজ্যগুলোর দিকে।
0 comentários:
Post a Comment