Thursday, May 28, 2020

ঝোপের প্রাচীর - বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রাচীর | History of The Great Hedg...



ব্রিটিশ শাসনামলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একটি সুদীর্ঘ প্রাচীর তৈরি করেছিল। ৪০৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রাচীরটি ঝোপের প্রাচীর নামে পরিচিত, ইংরেজীতে যাকে বলা হত The Great Hedge of India। তৎকালীন সময়ে এটিই ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রাচীর।

বৃটিশ শাসনামলে ভারতের অভ্যন্তরীন শুল্ক আদায়ের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই ঝোপের প্রাচীর তৈরি করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল লবণ ব্যাবসায়ীদের নিকট হতে কর আদায় নিশ্চিত করা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক লবণ কর সংগ্রহের এই চেস্টা পরবর্তী বৃটিশ শাসনামল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনামলে ৫৬৪ টি নেটিভ স্টেটস ছিল। এই এলাকাগুলো বৃটিশদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে ছিল না এবং তারা তখনও সেগুলোকে নিজেদের শাসনাধীনে আনেনি। তবে এদের অধিকাংশের উপর তাদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছিল। এসব এলাকা হতে লবণ বৃটিশ শাসনাধীন এলাকায় ঢুকে পড়ত বা অনেকেই নিয়ে আসত। এগুলো হতে বৃটিশরা কর পেত না বলে এদের উপর কিভাবে করারোপের নিয়ন্ত্রণ আনা যায়, সেই ভাবনা থেকেই বৃটিশরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন শেষে এই ঝোপের প্রাচীর নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়।

১৮০৩ সালে বিভিন্ন সড়কে এবং নদী বন্দরের নিকটস্থ এলাকায় তখন কর সংগ্রহের জন্য কাস্টমস হাউজ স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলো হতে শুধু লবণই নয়, তামাক এবং অন্যান্য দ্রব্যের উপরেও করারোপ করা হত। ১৮২৩ সালের দিকে গংগা এবং যমুনার তীর ঘেষে মীর্জাপুর থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পরবর্তীতে এলাহাবাদ থেকে নেপাল পর্যন্ত আরেকটি সেকেন্ডারি লাইন তৈরি হয়। কর সংগ্রহের জন্য স্থাপিত কাস্টমস হাউজসমুহ এবং কর জনীত বিভিন্ন রিফর্ম গুলোকে ১৮৪৩ সালে দাপ্তরিকভাবে ইনল্যান্ড কাস্টমস লাইন বলা হতো।

১৮৪০ সালের দিকে প্রথম এই Hedge Wall এর কাজ শুরু করা হয়। এই ঝোপের প্রাচীরের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৪০৩০ কিলোমিটার। এটি পাঞ্জাব থেকে শুরু করে দক্ষিণে উড়িষ্যায় বংগোপসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই প্রাচীরটি শুরুতে মরা কাটাওয়ালা গাছের ডালপালা দিয়ে শুরু করা হলেও পরে সেখানে জীবিত ঝোপ গাছ লাগানো হয়। কারন দীর্ঘ এই লাইনে কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। এসব ঝোপে ইদুর, উই এর ঢিপি হতে থাকে এবং এসবের পাশাপাশি আগুন লাগলে বা ঝড়ের সময় প্রাচীরটি ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ক্রমাগত রক্ষণাবেক্ষণ তখন একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এসব ঝোপ রক্ষনাবেক্ষনের জন্য প্রতি মাইলে মোট ২৫০ টন শুকনো ঝোপ এবং ডালপালার প্রয়োজন পড়ত এবং সেগুলো গড়ে প্রায় ৬ মাইল দূর থেকে সংগ্রহ করতে হতো। এ অবস্থায় এর বিশাল রক্ষণাবেক্ষণের কথা ভেবে প্রাচীরে জীবিত ঝোপ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তৎকালীন ভারতের অভ্যন্তরীন কাস্টমস ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক এই প্রাচীর বরাবর তাদের কাস্টমস অফিসার, জমাদার এবং অন্যান্য দাপ্তরিক লোক দিয়ে পেট্রোলিং করাতো, যাতে কেউ কর না দিয়ে লবণ পাচার করতে না পারে।

১৮৬৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে  বিভিন্ন স্থানের মাটির গুণাগুণ বিবেচনা, এলাকাভেদে বৃষ্টির পরিমাণ ও সেচের সুবিধার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরণের কাঁটাওয়ালা ঝোপ ঝাড়ের চারা লাগানো শুরু করা হয়।  যে সকল জায়গায় সেচের সুবিধা সীমিত ছিল সেসব স্থানে প্রাচীর ঘেষে নালা খোড়া হতো, যাতে সেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। একই সাথে প্রাচীর বরাবর রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এ সকল রাস্তা ধরেই মূলত কর বিভাগের লোকজন পেট্রোলিং করত।

এই প্রাচীর এতোই নিখুঁত ছিল যে, তা দিয়ে কোন মানুষ বা প্রাণী পার হতে পারতোনা। এ প্রাচীরটি ৮ থেকে ১২ ফুট উঁচু এবং ৪ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া ছিল।

যে সকল এলাকায় গাছ জন্মাতোনা সেসব এলাকায় শুকনো ঝোপ, এমনকি দেয়ালও স্থাপন করা হয়েছিল। অবশেষে ১৮৭৯ সালে এ প্রাচীরের সকল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ স্থগিত করা হয়।

১৮৭৬-১৮৭৮ এর দূর্ভিক্ষে করের হ্রাসের জন্য এই কাস্টমস লাইনের বিলুপ্তির পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরপর বিভিন্ন কর পদ্ধতি রিফর্মের মাধ্যমে এবং সকল লবণ উৎপাদনকারীকে তাদের উৎপাদন এলাকাতেই কর প্রদানের ব্যাবস্থা করা হয়। ১৮৭৯ সালে এই বিশাল ঝোপের প্রাচীর বা The Great Hedge Line এর বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়।

0 comentários:

Post a Comment

Feature Post