Monday, June 15, 2020

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা | History of The Pied Piper of Hamelin | ADVUT 365

ছোটবেলায় আমরা প্রায় প্রত্যেকেই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা গল্পটি পড়েছি। এটা যে শুধুই একটা গল্প তা কিন্তু না, এর পেছনে রয়েছে এক ইতিহাস।

ইতিহাসবিখ্যাত এ ঘটনাটির সত্যতা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে ১২৮৪ সালের ২২ জুলাই ঘটনাটি ঘটেছিল। দীর্ঘদিন অমীমাংসিত এই রহস্যের বিস্তর গবেষণা হয়েছে। বর্তমানে হ্যামিলনে যে পৌরসভা রয়েছে, তার নামের অর্থ হল ‘ইঁদুর ধরা লোকের বাড়ি’। এটি নির্মিত হয় ১৬০২ সালে। এর দেয়ালে বিশ্ববিখ্যাত কাহিনীটির ছবি চমৎকারভাবে আঁকা আছে। হ্যামিলিন শহরে এ সংক্রান্ত একটি জাদুঘরও রয়েছে। ঐ জাদুঘরে সঞ্চিত পঞ্চদশ শতাব্দীতে লেখা কয়েকটি বইয়ে এই রহস্যময় কাহিনীর বর্ণনা রয়েছে। ১২৯৪ সালে ফ্রাউ ভন লিউড নামের এক ১৩ বছরের বালিকার লেখা ডাইরি থেকে জানা যায়, সুদর্শন এ লোকটির বয়স ছিল আনুমানিক ৩০। তার বাঁশিটি ছিল রুপার তৈরি। অন্য এক নথিতে পাওয়া যায় ১৩০০ শতাব্দীতে হ্যামিলনের বাজারে এক কাঠের ফলক ছিল। সেখানে এক বংশীবাদক ও অনেক শিশুর ছবি ছিল। সেটা ১৭০০ সালে ঝড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। ১২৮৪ সালের ঘটনার পরেই ১৩০০ সালের দিকে চার্চে Stained-glass এর জানালা লাগানো হয়। যেখানে এই করুণ ঘটনা লেখা ছিল। জানালাটা বানাবার উদ্দেশ্যই ছিল শিশুদের স্মরণ করা। জানালাটা ধ্বংস হয়ে যায় ১৬৬০ সালে, পরে ইতিহাসবিদ হ্যান্স ডবারটিন ঐতিহাসিক লেখনী থেকে এই জানালা পুনঃনির্মাণ করেন। সেখানে দেখা যায় বাঁশিওয়ালা আর সাদা পোশাকে শিশুদের ছবি! বর্তমানের হ্যামেলিন শহরে যদি কখনো বেড়াতে যান তবে দেখবেন সেখানে বাঁশিওয়ালার মূর্তি, সাথে ইঁদুর। এই ঘটনার ৭২৫তম বার্ষিকীতে জার্মানিরা ২০০৯ সালে এক টুরিস্ট ফেস্ট আয়োজন করে। যে বাড়িতে খোদাই করা ছিল ইতিহাসটি, সেটিকে এখন “র‍্যাট ক্যাচার” এর বাড়ি বলে। প্রতি বছর ২৬ জুন পালন করা হয় র‍্যাট ক্যাচার দিবস। যে রাস্তায় সর্বশেষ বাঁশিওয়ালাকে দেখা গিয়েছিল বলে দাবী করা হয়, সে রাস্তার নাম ইংরেজিতে ‘নো ড্রাম স্ট্রিট’।  এ রাস্তায় কোন মিউজিক বাজানো নিষিদ্ধ। প্রায় ৭০০ বছর ধরেই এমনটি চলে আসছে বলে জানা যায়।

যদিও এই ঘটনার সপক্ষে পুথিগত ভবে কোন নথি বা পত্র খুজে পাওয়া যায়নি। আর এর কোন ব্যাখ্যাও আসলে দেয়া কষ্টকর। প্রাচীন নথিতে আগেও শহরে ছেলে ধরার ব্যাপারে জানা গিয়েছে। ধারনা করা হয়, ছেলেধরার কাহিনী গুলোকে ঘষে মেজে বাঁশিওয়ালার গল্প তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া ১২৮৪ এর দিকে জার্মানে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ইঁদুর ছিল এ রোগের বাহক। সে সময় শহরে ইঁদুর ধরার বিশেষ লোক ছিল যারা বাঁশি বাজিয় ইঁদুর ধরতো। এমন বাঁশি জার্মান জাদুঘরেও রয়েছে। সেসময় প্লেগে অনেক শিশু মারা যায়। সেক্ষেত্রে বলতে পারেন, গীর্জার দেয়ালে বা পুথির পাতায় বর্নিত ঘটনা গুলো আসলে রূপক অর্থে তুলে ধরা হয়েছে।

যেহেতু এই ঘটনা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই তাই, সত্যমিথ্যা বিশ্বাস সম্পূর্নটাই ব্যাক্তিগত। কালের বিবর্তনে সাধারন ঘটনা যেমন অসাধারন রূপ লাভ করে, ঠিক তেমনি দুনিয়াতে প্রতিনিয়ত ঘটে যায় অনেক অমিমাংশিত ঘটনা। যার সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারে না। তবে যাই হোক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ঘটনাটি জার্মানীতে জনপ্রিয় একটি গল্প বা ঘটনা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জার্মানবাসী এটি ধারন করে রেখেছে।

0 comentários:

Post a Comment

Feature Post