Saturday, June 20, 2020

নেদারল্যান্ডস - Netherlands | ADVUT 365



টলমলে স্বচ্ছ পানি, সারি সারি রংবেরঙের নৌকা। দুই তীরে গাছের সারিগুলো যেন কোনো শিল্পীর আঁকা ছবি। মাঠের পর মাঠ বিস্তৃত টিউলিপের সমাহার আর শত শত উইন্ডমিল  আপনাকে মুগ্ধ করবে। চোখ মেললেই মনে হয়, প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্য্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। আর যুগের পর যুগ সেই সৌন্দর্যে একটুও ভাটা পড়ে নি।

দেশটির উপকূলীয় অধিকাংশ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠের অনেক নিচে। চারপাশে কৃত্রিম বাঁধ তৈরি করে জায়গাগুলোকে বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। আর যুগের পরিক্রমায় গড়ে উঠেছে বড় বড় শহর। নেদারল্যান্ডসের বর্তমান ভূ-ভাগের ১৭ ভাগ হচ্ছে সমুদ্র এবং হৃদ থেকে উদ্ধারকৃত জমি। নেদারল্যান্ডসের ৬০ ভাগ জায়গা বন্যাপ্রবণ। পানি ব্যবস্থাপনা ডাচ জনগণের ঐতিহ্য ও রক্তে মিশে আছে। সুদীর্ঘকাল হতে তারা শিখেছে কিভাবে বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করে এর সঙ্গে টিকে থাকা যায়। ডাচ সরকার ও তাদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করে বড় বড় সব নদী এবং সাগরের জলরাশিকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। এ জন্য পোল্ডার, ডাইক, স্লুইস গেইট এবং ছোট ছোট অসংখ্য লেক, শাখানদী, জলাধার নির্মাণ করে পানি প্রবাহকে গতিশীল ও নিয়ন্ত্রণাধীন রেখেছে। অনেক জায়গায় নদীকে ড্রেজিং করে গতিশীলতা বাড়ানো হয়েছে, আবার অনেক জায়গায় অতিরিক্ত পানির প্রবাহ যাতে বন্যার সৃষ্টি না করে সেজন্য উইন্ডমিল ও শক্তিশালী পাম্প স্থাপন এবং বিদ্যমান নদীর পাশে আরেকটি নদী খনন করে পানি সংরক্ষণ ও পানি প্রবাহের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের প্রধান একটি জীবিকা হলো মৎস্য-শিল্প

নেদারল্যান্ডস বলতেই বেশীরভাগ মানুষের মনে আসে টিউলিপ আর উইন্ডমিল। মার্চের শেষের দিক থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত টিউলিপের সময়। টিউলিপ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল, এবং বৈদেশীক নীতিতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। উদাহরণ-স্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কানাডার সাহায্যের প্রতিদান হিসাবে প্রতি বছর নেদারল্যান্ডস থেকে দশহাজার টিউলিপ কানাডায় পাঠানো হয়। এপ্রিল মাস নাগাদ টিউলিপ ছাড়াও চেরীফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন। আমস্টেলভীনে চেরী-ব্লসম পার্ক প্রতিবছর এপ্রিল মাসে ভরে ওঠে চেরী ফুলে।

নেদারল্যান্ড এর একটি গ্রাম গিথুর্ন (Giethoorn)। ছবির মত সুন্দর, শান্ত শিষ্ট, সবুজেঘেরা রাজকীয় সৌন্দর্যের এই গ্রামটি নেদারল্যান্ডসের ভেনিস নামেও পরিচিত। রাজধানী আমস্টারডাম থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত গ্রামটি একদম নিরিবিলি ও যান্ত্রিক কোলাহলবিহীন। ১২৩০ সালে এই গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নৌকা করে ঘুরতে পারবেন পুরো গ্রামটি এছাড়া সাইকেল করেও ছোট ছোট রাস্তা ধরে ঘুরে নিতে পারেন। গ্রামের বিভিন্ন দিক দিয়ে খাল চলে যাওয়ায় গ্রামটি ছোট ছোট দ্বীপে ভাগ হয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে রয়েছে ১৫০টিরও বেশি কাঠের সেতু। এখানে খালের ধারে ধারে রয়েছে নানান ধরণের কটেজ। সবুজ ঘাস, গাছপালা এবং নানান রঙের ফুলের সমারোহ দেখা যায় এইসব কটেজ গুলোর আঙ্গিনায় কিংবা ক্যানেলের দুপাশের বাঁধানো পাড়ে।

নান্দনিক এবং রূপ কথার দেশের মতো পরম শান্তির এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় দু হাজার ৬শ। এই শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আপনি কিছু জাদুঘর এবং সংগ্রহশালাতেও ভ্রমণ করতে পারেন।

প্রকৃতি এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গাড়ির চেয়ে সাইকেলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সব জায়গায় সাইকেলের আলাদা রাস্তা পথিকের নজর কাড়ে। রাস্তার পাশে সারি সারি উইন্ডমিল, যা দিয়ে বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। আগেকার দিনে এই উইন্ডমিল ব্যবহার করা হতো গম-জাতীয় শষ্য ভাঙার জন্যে, আর এখন ব্যবহার করা হয় গ্রীন-এনার্জি হিসাবে বা জ্বালানী শক্তির বিকল্প হিসাবে। এখন যদিও বেশীরভাগ ধাতব উইন্ডমিলই দেখা যায়, কিন্তু আগেকার দিনের কাঠের উইন্ডমিলের আকর্ষণই আলাদা।

0 comentários:

Post a Comment

Feature Post